Header Ads

টার্কির অন্যতম প্রধান রোগ ব্লাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস


টার্কির অন্যতম প্রধান রোগ ব্লাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস সম্পর্কে টার্কি খামারীদের কোন ধারণ নেই বললেই চলে। টার্কিগুলো কেন অসুস্থ হচ্ছে আর কোন রোগের কারণে মারা যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা, হাজার হাজার টাকার ঔষধ খাইয়েও পাখিগুলো কে বাচাঁনো যাচ্ছে না, কোন ডাক্তার বা অভিজ্ঞ খামারীর প্রেসক্রিপশন/পরামর্শ, ভেষজ ঔষধ কোন কিছুই কাজে আসছে না---কিছু দিন আগে অনেক খামারীই এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সত্যিকার অর্থে ব্লাকহেড/হিস্টিমোনাস রোগের ফলে বিগত সময়গুলোতে সারাদেশ ব্যাপী অনেক টার্কি খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা অনেকে হতাশ হয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন; আবার অনেক নতুন স্বপ্ন নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করেছেন।
আপনি যদি টার্কি খামার করে লাভবান হতে চান তবে অবশ্যেই আপনাকে ব্লাকহেড বা হিস্টিমোনাস রোগটি সম্পর্কে জানতে হবে এবং এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; অন্যথায় আপনি যে কোন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন; এটা নিশ্চিৎ করেই বলা যায়।
আমাদের দেশে টার্কির রোগ-ব্যাধি নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই।
ব্লাকহেড ডিজিস কোথা থেকে এলো?
১৮৯২ সালে আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড এর রোড আইল্যান্ডে এ রোগটি দেখা দেয়। মজার বিষয় হলো চায়না রিং নেক ফিসেন্ট আমেরিকাতে ১৮৮১ সালে প্রথম আনা হয় এবং গেম বার্ড হিসাবে এটা দ্রুত স্থান করে নেয়। সাথে সাথে চুকারস পাখিটিও আমেরিকাতে গেম বার্ড হিসাবে প্রবেশ করে এবং এ দুটি পাখিই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরে।পরবর্তীতে গবেষণায় দেখা যায় এ গেম বার্ডই ব্লাকহেড রোগের প্রধানতম হোস্ট।
আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড, পশ্চিম ও পূর্ব আমরিকার বিভন্নি এলাকায় এবং কানাডাতে এ রোগটি ছড়িয়ে পরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত টার্কির খামারে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল্ এই ব্লাকহেড ডিজিস।
রোগ সংক্রমণের উৎস হিসাবে গেম বার্ডকে প্রায় খামারেই একেবারেই গুরুত্ব দেয়া হয় না। অথচ টার্কির খামোরে এই গেম বার্ডগুলো স্পস্টতই ব্লাকহেড রোগ সংক্রমণের ভান্ডার হিসাবে কাজ কর।
গবেষণায় দেখা গেছে মুরগীর চেয়ে ফিসেন্ট ও চুকারস হেটেরেকিস কৃমির ভাল হোস্ট এবং ব্লাকহেড ডিজিস এ এদের তেমন কোন সমস্যা হয় না তাই ফিসেন্ট ও চুকারস ব্লাকহেড ডিজিস এর বাহক হেটেরেকিস এর আদর্শ আবাসস্থল।
কীভাবে হয়?
হিস্টিমোনাস মিলিয়াগ্রিডিস নামক এক কোষি প্যারাসাইট এর কারণে ব্লাকহেড ডিজিস হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের সিকামে বসবাসকারী হেটেরেকিস নামক সিকল কৃমির (caecal worm) ডিম ও লার্ভা এ রোগের বাহক। হেটেরেকিস কৃমির ডিম ও লার্ভাতে হিস্টিমোনাস মিলিয়াগ্রিডিস নামক এক কোষি প্যারাসাইট বসবাস করে। হেটেরেকিস কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটিতে বসবাসকারি কেঁচোর মধ্যে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মুরগীর তুলনায় টার্কিতে ব্ল্যাকহেড ডিজিজ এর প্রভাব খুবই মারাত্মক এবং এর রোগের কারণে পুরো টার্কি খামারই ধ্বংশ হতে যেতে পারে। হেটেরেকিস কৃমির ডিম/লার্ভা যুক্ত মুরগীর পায়খানা খাওয়ার মাধ্যমে এবং এ কৃমির ডিম ও লার্ভা ধারণকারী কেচোঁ-পোকা খাওয়ার মাধ্যমে টার্কিতে ব্ল্যাকহেড রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি প্রথমে টার্কির পরিপাকতন্ত্রের সিকায় ক্ষত/আলসার সৃষ্টি করে এবং পাখি ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে এটি পাখির সিকার ক্ষত স্থান দিয়ে রক্তনালীতে প্রবেশ করে লিভারে পৌঁছায় এবং লিভারে ছোট ছোট হোল/গর্তের সিৃষ্টি করার মাধ্যমে লিভারকে অকার্যকর করে ফেলে; অবশেষে পাখি মারা যায়।
লক্ষণঃ
সংক্রমিত হওয়ার ৭-১২ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে-
১.অকস্মিক বা হঠাৎ মৃত্যু।
২.অবসাদগ্রস্ততা, ক্ষুদা হ্রাস পাবে এবং পিপাসা বৃদ্ধি পাবে।
৩.উজ্জল হলুদাভাব ডায়েরিয়া(sulphur-yellow diarrhoea)
৪.অনেক ক্ষেত্রে মাথার রং নীলাভ-কাল বর্ণ্ ধারণ করে থাকে।
৫. সিকার প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি হয় ( সিকা স্ফীত হয় আবার কোথাও ছোট ও পাতলা হয়)।
৬. খাবার হজম হয়না, খাদ্র থলিতে খাবার ও পানি জমা হয়ে থাকে।
৭. পাখা ঝুলে পরে এবং পালক উস্কু-খুস্কু হয়ে পড়ে।
৮. অপেক্ষাকৃত বয়স্ক পাখি মারা যাওয়ার আগে চরম মাত্রায় ওজন হ্রাস পাবে এবং শরীরের চর্বি এবং মাংশ পেশীগুলো শুকিয়ে
একেবারেই হালকা হয়ে যাবে।
৯. আক্রান্ত মুরগী ২-৪ দিনেই মারা যায়।
কীভাবে সংক্রমণ ঘটে?
১. টার্কির খামারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মুরগী, ফেন্সি আইটেম ও গেম বার্ড থেকে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। টার্কির পাশাপাশি খামারে থাকা মুরগী ও গেম বার্ডের পরিপাকতন্ত্রের সিকামে বসবাসকারী হেটেরেকিস নামক সিকল কৃমি (caecal worm) এ রোগের ধারক ও বাহক। এতে খামারে থাকা বাহক মুরগী বা গেম বার্ডের তেমন ক্ষতি না হলেও এসব মুরগী ও গেম বার্ডের সংস্পর্ষে এসে টার্কি সহজেই এ প্রাণঘাগতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
২. সংক্রমিত পাখির সংস্পর্ষে থেকে সুস্থ পাখিও সংক্রমিত হয়; মূলত আক্রান্ত পাখির মল বা মলযুক্ত খাবার/পানি গ্রহণ করার ফলে।
৩. টার্কি মাটিতে থাকা কেচোঁ খেলে; কারণ হেটেরেকিস কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটিতে বসবাসকারি কেঁচোর মধ্যে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
৪. লিটারে থাকা গুবেরে পোক বা গুবরে পোকার মতো অন্যান্য পোকা খেলেও টার্কির শরীরে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে।
এন্টিকক্সিডিয়ালি অথবা এন্টিবায়োটক দ্বার কি হিস্টোমানাস/ব্লাকহেড ডিজিস কি নিরাময় হয়?
সরাসরি উত্তর হলোঃ না। এই এককোষী প্যারাসাইট হিস্টোমোনাস এর ইউনিক স্ট্রাকচার ও মেটাবলিজম এর কারনে কোন এন্টিকক্সিডিয়াল অথবা এন্টিবায়োটকি একে ধ্বংশ করতে পারে না; তবে সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন এর ক্ষেতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।
প্রতিরোধেই একমাত্র সমাধানঃ
১. এ রোগ নিরাময়ের জন্য এখনও পর্যন্ত কার্যকারি কোন ঔষধ না থাকায় সারা বিশ্বেই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আক্রান্ত পাখিকে সাথে সাথে সুস্থ পাখি থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে আলাদা রাখার ব্যবস্থাপনার উপর গুরোত্ব আরোপ করা হয়।
২. খামারে টার্কির পাশাপাশি অন্যান্য মুরগী, ফেন্সি মুরগী এবং গেম বার্ড পালন করতে হলে অবশ্যই-অবশ্যই যথাযথাভাবে রুটিনমাফিক কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে। কারণ কৃমিই এ রোগের ধারক ও বাহক।
৩. খামারের লিটার সবসময় পরিস্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে হবে।
৪. পাখির চারণভূমিতে কেচোঁর পরিমাণ যাতে কম থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বা কেচোঁ বসবাসকারী স্থানে টার্কির প্রবেশ রহিত করতে হবে।
৫. অসুস্থ পাখিকে অবশ্যই সাথে সাথে দূরে আলাদা শেডে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।এতে করে আপনার অন্যান্য সুস্থ পাখিগুলো রক্ষা পাবে। ব্লাকহেড রোগ প্রতিরোধ ও সংক্রমণ ঠেকাতে অসুস্থ পাখিকে আলাদা রাখাই সবচেয়ে কার্যকর রণ কৌশল। এ পদক্ষেপটিই আপনার খামারকে বাচিঁয়ে দিবে।
এক কথায় বলতে পারি যে, হেটেরেকিস নামক সিকল কৃমির ধারক ও বাহক মুক্ত খামার গড়তে পারলেই আপনার খামারে এ প্রাণঘাতী রোগটি কখনও প্রবেশ করতে পারবে না।
সারা বিশ্বে লেয়ার ফার্মগুলোতে ব্লাহহেড সংক্রমণের ঝুকিঁ কমানোর জন্য ওরেগানো (Viovit) ব্যবহার করা হয়।
চিত্রে হেটেরেকিস কৃমির জীবনচক্রে দেখা যাচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক মুরগীর সিকাম থেকে পায়খানার সাথে বেরিয়ে আসছে। পায়খানা সরাসরি খাওয়ার মাধ্যমে এ কৃমির ‍ডিম ও লার্ভা্ অন্য মুরগী/টার্কিতে প্রবেশ করছে। আবার বা মাটিতে বাসকারী কেচোঁর মাধ্যমে এ কৃমির ‍ডিম ও লার্ভা্ অন্য মুরগী/টার্কিতে প্রবেশ করছে।

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.