Header Ads

মুরগির সি আর ডি


সি আর ডি কমপ্লেক্স রেস্পিরেটরী ডিজিজ”এটি একক ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার কারণে হয় না,উভয়ের যৌথ আক্রমণের কারণে হয়।
প্রধানত এমোনিয়াকে প্রথম কারণ হিসেবে ধরা হয় যা মুরগির লিটারের মলমূত্রের সাথে আর্দ্রতার উপস্থিতিতে হয়।
এমোনিয়া মুরগির ট্রাকিয়াতে বিদ্যমান সিলিয়াকে ধবংস করে দেয় যা মূলত চুল জাতীয় অংশের সম্মুখ প্রান্ত এবং এটি ধূলিকণা ও অন্যান্য কণাকে আটকে দেয়।
যার কারণে ট্রাকিয়ার আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।এই ক্ষয়ে যাওয়া ট্রাকিয়ার আস্তরণ ভাইরাস বা ব্যাক্টিয়ার প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকে,যা পরে ট্রাকিয়ার আরো ক্ষতি সাধন করে।পরবর্তীতে সুযোগ সন্ধানী ব্যাক্টেরিয়া হিসেবে ইকলাই ট্রাকিয়তে প্রবেশ করে এবং এয়ারস্যাকে এয়ারস্যাকুলাইটিস করে।
এটি বাংলাদেশ,শ্রীলংকা ও ভারতের পোল্ট্রি শিল্পের প্রধান সমস্যা।
বিভিন্ন জীবানূ যেমন মাইকোপ্লাজমা,আই বি,এন ডি ও উচ্চমাত্রায় এমোনিয়া এসব কারণে হয়ে থাকে।
এই উপমহাদেশে বছরে প্রায় ১০০০কোটি টাকা ক্ষতি হয়।ক্ষতির কারণ ওজন হ্রাস,এফ সি আর বৃদ্ধি,হ্যাচাবিলিটি হ্রাস,মৃত্যহার বৃদ্ধি ও বাচ্চার মান খারাপ।তাছাড়া চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায়।
অনেকে একে ক্লিনিকেলি ই কলাই বলে থাকে।
স্বাধীনভাবে বেচে থাকা অণূজীবদের মধ্যে মাইকোপ্লাজমা হচ্ছে সবচেয়ে ছোট।এটি এপিথেলিয়াল টিস্যু বিশেষ করে শ্বাসনালীর টিস্যুর প্রতি আসক্তি রয়েছে।এ জীমানূ কোষের উপরিভাগে অবস্থান করে কোষের পুস্টি গ্রহণ করে কোষের ক্ষতি সাধন করে,ক্ষতিকর বিপাকীয় প্রোডাক্ট(হাইড্রোজেন পার অক্সাইড)উতপাদন করে এবং ইমোউনিটি নষ্ট করে দেয়।
এর কোষ প্রাচীর নেই কিন্তু নিউক্লিয়াস আছে,এটি পরিবেশে সহজে বেচে থাকতে পারে।
জৈব পদার্থে এটি ১৮ মাস বেঁচে থাকে।
এটি ট্রাকিয়া,এয়ারস্যাক,ফুসফুস,জয়েন্ট ও প্রজনন অংগের প্রতি আসক্তি আছে।
এর ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৬-২১ দিন।
কারণ
মাইকোপ্লাজমা
আই বি
এন ডি
আই এল টি
পক্স
নিউমো ভাইরাস
এ আই
এমোনিয়া
মাইকোপ্লিজমাকে ই কলাই এর ক্লিনিকেল আউটব্রেক এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মাইকোপ্লাজমার ১৬টি প্রজাতি আছে কিন্তু ৩ টি প্রজাতি রোগ তৈরি করে।
সি আর ডি ক্ষেত্রে মাইকোপ্লাজমার ভূমিকা
১।মাইকোপ্লাজমা পরোক্ষভাবে মুরগির ইমোনিটি নষ্ট করে যার ফলে টিকার প্রতি ভাল সাড়া দেয় না,এতে গাম্বোরু,এন ডি,করাউজা,কলেরার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
২।মাইকোপ্লজমার উপস্থিতিকে বিভিন্ন শ্বাসতান্ত্রিক রোগের বিরুদ্ধে লাইভ টিকা সাড়া না দিয়ে অস্বাভাবিক টিকা রিয়াকশন করে
রোলিং রিয়াকশন সৃস্টি করে ফলে সি আর ডি বা সি সি আর ডি এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।।মাইকোপ্লাজমা শ্বাসতন্ত্রের আবরণকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং ইকলাই এর প্রবেশ ও বংশবিস্তার এর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে থাকে যার ফলে মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
৪।মাইকোপ্লাজমার ফলে ই কলাই এর পুনঃসংক্রমণ ঘটে থাকে।
৫।ব্রয়লারে মাইকোপ্লাজমার ফলে এফ সি আর বেড়ে যায় ও ওজন কমে যায়।
৬।লেয়ারে মুরগি প্রতিডিমের সংখ্যা কমে যায়,ডিমের মা ন খারাপ হয়,খাদ্য খরচ বেড়ে যায়।
৭।ব্রিডারে হ্যাচাবিলিটি ,ফারটিলিটি,ডিমের সংখ্যা ও মান খারাপ হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ
মাইকোপ্লাজমার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে বিভিন্ন রো গ হয় যেমন
করাইজা
ই কলাই
এন ডি
গাম্বোরু
আই বি
মাংস ও ডিমের উৎপাদন কমে যায় এবং এদের মান খারাপ হয়।
প্রত্যক্ষ ক্ষতিঃ
ডিম কমে যায় ১০-২০%
ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন কমে যায় ৫-১০%
বাচ্চা মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় ৫-১০%
ব্রয়লারের ওজন ও মাংসের মান খারাপ হয় ১০-২০%
এফ স আর বেড়ে যায় ১০-২০%
ভ্রুনের মৃত্যু হার বৃদ্ধি পায় ১৫-২০%
রোগ বিস্তারের মাধ্যমঃ
ডিম
খাদ্য
পানি
পায়খানা
কর্মচারী
ই কলাই হলো ২য় পর্যায়ের আক্রমণকারী
অনেক সময় ভ্যাক্সিন পরবর্তী মারাত্মক রানিক্ষেত,আই বি , আই এল টি প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয় যা মূলত বাচ্চাকে স্প্রের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রদানের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে এবং এ ক্ষেত্রে পূর্বেই মাইকোপ্লাজমা বা ই কলাই এর সংক্রমণ থাকে।
যখন মাইকোপ্লাজমার সংক্রমণের সাথে শ্বাসতান্ত্রিক ফিল্ড ভাইরাস বা ভ্যাক্সিন বা ইমোনোসাপ্রেসিভ এজেন্ট এবং নিম্ন মানের ব্যবস্থপনার সংশ্লিষ্ট থাকে তখনই সি আর ডি উদ্ভট ঘটে।
এর সাথে ই কলাই এর উপস্থিতি এ প্রক্রিয়াকে জটিলতর করে তোলে যা পরবর্তীতে সি সি আর ডি তে রুপ নেয়।
কমপ্লিকেটেড ক্রনিক রেস্পিরেটরি ডিজিজ এ আক্রান্ত মোরগ মুরগিতে রানীক্ষেত,গাম্বোরু,কলিসেপ্টিসেমিয়া,করাইজা,কলেরা,আই বি পরিলক্ষিত হয়
কেন মাইকোপ্লাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগঃ
এরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ফাকি দিতে সক্ষম/
আক্রান্ত মুরগি বাহক হিসেবে কাজ করে সারাজীবন।
এদের বিরুদ্ধে টিকা ভাল কাজ করেনা।
বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে এরা রেজিস্টেন্স তৈরি করে।
মাইকোপ্লাজমা দূরীকরণ কেন প্রয়োজনঃ
মাইকোপ্লাজমা হলে সেকেন্ডারী ইনফেকশন ঘটে ফলে এটি জটিল আকার ধারণ করে।
আক্রান্ত মুরগি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে টিকা কাজ করেনা।
মাইকোপ্লাজমা দ্বারা আক্রান্ত হলে ভাইরাস জনিত রোগ দেখা দেয় ফলে মৃত্যু হার বেড়ে যায়,ডিম কমে যায়।
এটি মুরগিতে সাবক্লিনিকেল রুপে থাকে ফলে মুরগির শারীরিক বৃদ্ধি ও উৎপাদন কমে যায়।
যে কোন ধকলে মাইকোপ্লাজমোসিস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।একবার মাইকোপ্লাজমোসিসে আক্রান্ত হলে আজীবন থাকে।
রোগের লক্ষণ
মুরগি মারা যায় না কিন্তু ডিম কমে যায়।
এটি ধীর গতিতে বিস্তার লাভ করে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লাগে।খাবার কম খায় তাই ডিম ও ওজন কমে যায়।
সাইনোসাইটিস ,কনজাংটিভাইটিস এর পাশাপশি চোখের আশ পাশের টিস্যুতে সংক্রমণ ঘটায়।যেসব মুরগ মুরগি মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় সেসব ক্ষেত্রে সাইনোসাইটিসের ফলে মুখ ফুলে যায় ,চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে যা এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
হাচি হয়,কাশি দেয় বিশষ করে খাদ্য দেবার সময় মুরগি কাশির শব্দ করে ও নাক টানতে দেখা যায়।
শ্বাসকষ্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় ঘড় ঘড় শব্দ করে যা রাতের বেলায় বেশি শোনা যায়।
মুখ ও চোখের পাতা ফোলে যায় যা অনেক সময় করাইজার মত মনে হয়।খাবার কমে যায়।
মাইকোপ্লাজমা সাইনোভির কারণে জয়েন্ট ফোলে যায় ,মুরগি হাটতে পারেনা।
পোস্ট মরটেমঃ
এয়ারস্যাকের উপর সাদা ঘোলাটে আবরণ পড়ে।হার্ট,লিভার ও পেরিনিয়ামের উপর সাদা বর্ণের ফাইব্রিন দেখা যায়।(Fibrinous perihepatitis,pericarditis)
ট্রাকিয়া,সাইনাস বা অস্থি সন্ধিতে সাদা দধির মত পদার্থ দেখা যায়(cheasy exudate).
ফুসফুস তুলনামূলকভাবে শক্ত,ফাইবারযুক্ত হয় এবং ফুসফুস পাজরের খাচার সাথে শক্তভাবে লেগে থাকতে দেখা যায়।
তাছাড়া হলুদাভ দধি বর্ণের এয়ারস্যাকের লক্ষণ যা থোরাসিক ও এবডোমিনাল অংশে দেখা যায়।
রোগ নির্ণয়
লক্ষণ,সেরোলজি,পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রতি সাড়া ইত্যাদি দেখে এই রোগ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
৫-২০% পর্যন্ত উৎপাদন ঘাটতি হলে মাইকোপ্লাজমা আছে বলে মনে করা হয়।
তাছাড়া লেয়ার ও ব্রিডারে ক্রমাগত ডিম কমে যাওয়া,নিম্নমানের ডিম এবং নিম্ন মৃত্যুহার সাবক্লিনিকেল মাইকোপ্লাজমা নির্দেশ করে।
ব্রয়লারের ক্ষেত্রে এফ সি আর বৃদ্ধির সাথে কোন রকম সুনিরদিষ্ট লক্ষণের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি থাকলে মাইকোপ্লাজমা থাকার সম্বাবনা থাকে।
মৃত বা দুর্বল মুরগির পোস্ট মরটেমঃ
এয়ারস্যাকে লিশন পাওয়া যায়।
ইকলাই এর কারণে পেরিকারডাইটিস বা পেরিহেপাটাইটিস হলে মাইকোপ্লজামা নিশ্চিত করে।
সেরোলজিঃ
রেপিড প্লেট সিরাম এগ্লোটিনেশন টেস্ট যা খামারে করা যায়,ইলাইজা যা ল্যাবে করা হয়।
পিপড এম্ব্রায়ো টেস্ট যা হ্যাচারীতে করা হয়।
মলিকুলার টেস্টঃপি সি আর
বায়োকেমিকেলঃটেট্রাজোলিয়াম মিথিলিন ব্লু রিডাকশন টেস্ট
চিকিৎসাঃ
প্লোরুনিউটিলিন গ্রোপঃ
টিয়ামুলিন হাইড্রোজেন ফিউমারেট
ম্যাক্রোলেড গ্রোপঃ
টিলমাইকোসিন
টিলভেলোসিন টারট্রেট(এভ্লোসিন)
এসিটাইল আইসোভ্যালেরিল টাইলোসিন ট্রারট্রেট(লেক্স সুপার ট্রাইলো)
ইরাথ্রোমাইসিন
এজিথোমাইসিন
ফ্লোরুকুইনোলনঃ
সিপ্রো,এনরূ,নর,ড্যানোফ্লক্সাসিলিন।
টেট্রাসাইক্লিন গ্রোপঃডক্সি,অক্সি,সিটিসি
এমাইনোগ্লাইকোসিনঃ
জেন্টামাইসিন,কেটামাইসিন
মাইকোপ্লাজমার সাথে করাইজা থাকলে
পানিতে সালফার ড্রাগ আর খাবারে টেট্রাসাইক্লিন দিলে ভাল হয়।
মাইকোপ্লাজমার সাথে সাবক্লিনিকেল রুপে রানিক্ষেত থাকলে
পানিতে রানিক্ষেতের ক্লোন টিকা দেয়ার পর চিকিৎসা দিতে হবে।
মাইকোপ্লাজমার সাথে যদি আই বি থাকে তাহলে Hioral H120 or IB4/91 দেয়ার পর চিকিৎসা দিতে হবে।
চিকিৎসা দ্বারা মাইকোপ্লাজমা রোগ নির্মূল সম্বব না শুধু সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উদ্দেশ্য।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণঃ
বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা
মাইকোপ্লাজমা মুক্ত বাচ্চা আনা
খাবারে যাতে ইকলাই না থাকে বিশেষ করে পিলেট খাবারে ইকলাই তেমন থাকে না।
অল ইন অল আউট মেনে চলা।
নিয়মিত সেরোলজিকেল টেস্ট করা।
ব্রিডারকে মাইকোপ্লাজমা, ই কলাই,এন ডি ,আই এল টি,আই বি ডি রোগের টিকা দেয়া উচিত।
মাইকোপ্লাজমা পজেটিভ ব্রিডারকে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক দিতে হবে যাতে ডিমের মাধ্যমে এর বিস্তার রোধ হয়।

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.